ঢাকা ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ইস্যুতে উত্তেজনা

শিপার মাহমুদ
  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • / 50

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল সকাল থেকে সতর্ক অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী। বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশিও চালানো হয়। ছবি : সংগৃহীত

প্রথম পোস্ট সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনর্বাসন নিয়ে দেশের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ তুলেছেন যে, দলটিকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সঙ্গে এক বৈঠকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

ড. ইউনূসের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এনসিপি। শুক্রবার রাত ৮টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতি ও জুলাই গণহত্যার মতো ঘটনার বিচারে কার্যকর অগ্রগতি ছাড়া এ ধরনের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ আখ্যা দিয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান।

এদিকে, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। একই দাবিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

আরও পড়ুন: শেরপুরে ফসলি জমিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে বন্য হাতির মৃত্যু

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, ভারতের সমর্থনে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি দল গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে। শুক্রবার রাতে ফেসবুকে তিনি লিখেন, “১১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে আমাদের কাছে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। আসন সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়, যা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি।” তার দাবি, সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী ও শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে এই দল গঠনের চেষ্টা চলছে, যারা শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করে ‘বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।”

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বিচার শেষে জনগণ চাইলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে। তবে ন্যায়সঙ্গত বিচার হলে ফ্যাসিবাদের পুনর্জন্ম হবে না।” জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুকে লিখেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারই এখন অগ্রাধিকার।”

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ শুক্রবার এক সভায় বলেন, “আওয়ামী লীগের বিচারের আগে যারা পুনর্বাসন চায়, তাদের প্রতিহত করা হবে।” এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভে বলেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চেষ্টা হলে আবার অভ্যুত্থান হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া ফেসবুকে লিখেন, “গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর চিন্তা বিপজ্জনক।” এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমও বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।”

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশে এবি জুবায়ের বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ব্যর্থ। গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হোক।” তিনি ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেন।

প্রথম পোস্ট/এসআর

নিউজটি শেয়ার করুন

রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ইস্যুতে উত্তেজনা

আপডেট সময় : ০৩:১৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনর্বাসন নিয়ে দেশের রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ তুলেছেন যে, দলটিকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সঙ্গে এক বৈঠকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

ড. ইউনূসের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এনসিপি। শুক্রবার রাত ৮টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতি ও জুলাই গণহত্যার মতো ঘটনার বিচারে কার্যকর অগ্রগতি ছাড়া এ ধরনের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ আখ্যা দিয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান।

এদিকে, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ ও জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। একই দাবিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

আরও পড়ুন: শেরপুরে ফসলি জমিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে বন্য হাতির মৃত্যু

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, ভারতের সমর্থনে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি দল গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে। শুক্রবার রাতে ফেসবুকে তিনি লিখেন, “১১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে আমাদের কাছে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। আসন সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়, যা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি।” তার দাবি, সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী ও শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে এই দল গঠনের চেষ্টা চলছে, যারা শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করে ‘বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।”

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বিচার শেষে জনগণ চাইলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে। তবে ন্যায়সঙ্গত বিচার হলে ফ্যাসিবাদের পুনর্জন্ম হবে না।” জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুকে লিখেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারই এখন অগ্রাধিকার।”

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ শুক্রবার এক সভায় বলেন, “আওয়ামী লীগের বিচারের আগে যারা পুনর্বাসন চায়, তাদের প্রতিহত করা হবে।” এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভে বলেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চেষ্টা হলে আবার অভ্যুত্থান হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া ফেসবুকে লিখেন, “গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর চিন্তা বিপজ্জনক।” এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমও বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।”

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশে এবি জুবায়ের বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ব্যর্থ। গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হোক।” তিনি ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেন।

প্রথম পোস্ট/এসআর