দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি ফেরি সংযোগ পেল দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। সোমবার (২৫ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়া এই ফেরি সার্ভিস সন্দ্বীপবাসীর জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সকাল ৯টায় প্রথম ফেরি সন্দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন এ সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

দীর্ঘদিন ধরে ট্রলার ও স্পিডবোটের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা সন্দ্বীপবাসীর একমাত্র ভরসা ছিল। বৈরী আবহাওয়ার সময় দ্বীপটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত, জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়াও হতো কষ্টসাধ্য। এখন ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সন্দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও নিরাপদ ও সুবিধাজনক হলো।

আরও পড়ুন: তিতাস নদীতে নিখোঁজের ২৬ ঘণ্টা পর বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

এ উপলক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নতুন যাতায়াত সুবিধা: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, প্রতিটি ফেরিতে একসঙ্গে ৩৫টি যানবাহন ও ৬০০ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। জোয়ার-ভাটার সময় অনুযায়ী প্রতিদিন চারবার চলবে ফেরি, যেখানে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যেতে সময় লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা ১০ মিনিট।

এছাড়া, ফেরি সার্ভিস চালুর পাশাপাশি ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস এবং চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট-সি বিচ-নিমতলা-বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট-সন্দ্বীপ এনাম নাহার মোড় রুটে এসি বাস সেবা চালু হয়েছে। এতে সন্দ্বীপের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।

ভাড়া নির্ধারণ: ফেরিতে চলাচলের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যে রয়েছে—
✅ সাধারণ যাত্রী: ১০০ টাকা
✅ মোটরসাইকেল: ২০০ টাকা
✅ সিএনজিচালিত অটোরিকশা: ৫০০ টাকা
✅ ব্যক্তিগত গাড়ি: ৯০০ টাকা
✅ বাস: ৩,৩০০ টাকা
✅ ট্রাক: ৩,৩৫০ টাকা
✅ ১০ চাকার ট্রাক: ৭,১০০ টাকা

উন্নয়নের নতুন দিগন্ত: সন্দ্বীপের সন্তান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান বলেন, “ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে সন্দ্বীপ জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলো। এটি দ্বীপের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সাগরের গর্জনে যে দ্বীপ এতদিন অপেক্ষার প্রহর গুনছিল, সেখানে এখন উন্নয়নের নতুন বাতাস বইতে শুরু করেছে। সন্দ্বীপের মানুষদের জন্য এটি শুধু যোগাযোগের নতুন দিগন্ত নয়, বরং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রথম পোস্ট/এসআর