ঢাকা ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে বন্ধ ৩৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:২৭:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
  • / 42
প্রথম পোস্ট সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কাটাগড় গ্রামে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ’ মেলা এ বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। স্থানীয় বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।

প্রতি বছর বাংলা পঞ্জিকার ১২ চৈত্রে শাগির শাহ (রহ.) এর ওফাত (মৃত্যু) দিবসে কাটাগড় গ্রামে এই মেলা শুরু হয়, যা প্রায় এক মাস ধরে চলে। এই বছর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল মেলাটি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি ৩৫১তম মেলা হিসেবে আয়োজন করা হতো, কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এবার তা বন্ধ হয়ে গেল। অতীতেও করোনা মহামারির সময়ও মেলার আয়োজন হয়েছিল, কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো মেলা আয়োজন বন্ধ হচ্ছে।

এলাকাবাসী এবং স্থানীয় প্রশাসন জানায়, কাটাগড় মেলার আয়োজনের জন্য রূপাপাত ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাস মন্টু ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আনিচুর রহমান টিটো ৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাদের পক্ষ বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামচুউদ্দিন মিয়া, যিনি ফরিদপুর-১ আসনের (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, সমর্থক।

অপরদিকে, বিএনপির অপর পক্ষ, যারা খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক, তারা ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে মেলা আয়োজনের জন্য আবেদন করে। এ দুটি পক্ষের মধ্যে কাটাগড় মেলা উপলক্ষে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। ১৫ মার্চ এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তাদের অনুসারীরা। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছে। সেইসঙ্গে মানববন্ধনও আয়োজন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানভীর হাসান চৌধুরী জানান, দুই পক্ষের সম্মতিতে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে, তবে সংঘর্ষের ঘটনা এবং স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বিবেচনায় মেলা আয়োজনের অনুমতি মুলতুবি রাখা হয়েছে। তবে, তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহের মাজারে ওরশ শরীফের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে।

কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ (রহ.) এর মাজারের ৯ম খাদেম সিদ্দিক ফকির বলেন, “এ মেলা প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে কখনো মেলা বন্ধ হয়নি। এ বছর কেন মেলা বন্ধ হলো, সেটা আমরা জানি না। আমাদের আশা, এখানে আবার মেলা শুরু হোক।”

স্থানীয় বিএনপির নেতা শামচুউদ্দিন মিয়া অভিযোগ করেন, “এ মেলা আয়োজনে দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিরোধ রয়েছে, যা রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলস্বরূপ।” অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম জানান, “মেলা বন্ধ হওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই, মূল সমস্যা মেলার আয় থেকে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে।”

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, “এখনো পর্যন্ত মেলা সংক্রান্ত পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। দুপক্ষের সংঘর্ষের কারণে মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কারণ পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”

এভাবে, কাটাগড় মেলা না হলেও, ওরশ শরীফ অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন অনুমতি প্রদান করেছে, যা স্থানীয়দের জন্য একটি স্বস্তির খবর।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে বন্ধ ৩৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা

আপডেট সময় : ০৮:২৭:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কাটাগড় গ্রামে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ’ মেলা এ বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। স্থানীয় বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।

প্রতি বছর বাংলা পঞ্জিকার ১২ চৈত্রে শাগির শাহ (রহ.) এর ওফাত (মৃত্যু) দিবসে কাটাগড় গ্রামে এই মেলা শুরু হয়, যা প্রায় এক মাস ধরে চলে। এই বছর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল মেলাটি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি ৩৫১তম মেলা হিসেবে আয়োজন করা হতো, কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এবার তা বন্ধ হয়ে গেল। অতীতেও করোনা মহামারির সময়ও মেলার আয়োজন হয়েছিল, কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো মেলা আয়োজন বন্ধ হচ্ছে।

এলাকাবাসী এবং স্থানীয় প্রশাসন জানায়, কাটাগড় মেলার আয়োজনের জন্য রূপাপাত ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাস মন্টু ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আনিচুর রহমান টিটো ৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাদের পক্ষ বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামচুউদ্দিন মিয়া, যিনি ফরিদপুর-১ আসনের (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, সমর্থক।

অপরদিকে, বিএনপির অপর পক্ষ, যারা খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক, তারা ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে মেলা আয়োজনের জন্য আবেদন করে। এ দুটি পক্ষের মধ্যে কাটাগড় মেলা উপলক্ষে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। ১৫ মার্চ এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তাদের অনুসারীরা। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছে। সেইসঙ্গে মানববন্ধনও আয়োজন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানভীর হাসান চৌধুরী জানান, দুই পক্ষের সম্মতিতে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে, তবে সংঘর্ষের ঘটনা এবং স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বিবেচনায় মেলা আয়োজনের অনুমতি মুলতুবি রাখা হয়েছে। তবে, তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহের মাজারে ওরশ শরীফের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে।

কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহ (রহ.) এর মাজারের ৯ম খাদেম সিদ্দিক ফকির বলেন, “এ মেলা প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে কখনো মেলা বন্ধ হয়নি। এ বছর কেন মেলা বন্ধ হলো, সেটা আমরা জানি না। আমাদের আশা, এখানে আবার মেলা শুরু হোক।”

স্থানীয় বিএনপির নেতা শামচুউদ্দিন মিয়া অভিযোগ করেন, “এ মেলা আয়োজনে দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিরোধ রয়েছে, যা রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলস্বরূপ।” অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম জানান, “মেলা বন্ধ হওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই, মূল সমস্যা মেলার আয় থেকে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে।”

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, “এখনো পর্যন্ত মেলা সংক্রান্ত পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। দুপক্ষের সংঘর্ষের কারণে মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কারণ পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”

এভাবে, কাটাগড় মেলা না হলেও, ওরশ শরীফ অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন অনুমতি প্রদান করেছে, যা স্থানীয়দের জন্য একটি স্বস্তির খবর।