ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
**সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ**
Logo শেখ মুজিবের জন্য ১০ লাখ মানুষ মারা গেছে: শফিকুল আলম Logo আমরা বেঁচে থাকতে সীমান্তে কেউ আসতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে যুবদল নেতা ছুরিকাঘাতে নিহত Logo মৌলভীবাজারে শাহ মোস্তফা (রহ.)-এর ওরসে হাজারও ভক্ত অনুরাগী ও দর্শনার্থীদের সমাগম Logo গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ছাড়া এই সরকার বেআইনি ও অবৈধ Logo সংস্কার প্রতিবেদন থেকে নতুন চার্টার, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে প্রেরণা মেধাবৃত্তি’র ফলাফল প্রকাশ Logo জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo শেরপুরে চলছে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা Logo মনে রাখবেন যারা অন্যায় করের তারা সংখ্যায় কম, আপনারা দাঁড়িয়ে গেলে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাবে: সারজিস আলম

সুন্দরবনে আত্মসমর্পণকারী বনদস্যু বাহিনীর উৎপাত

মুক্তিপণ দিয়েই ছাড় পাচ্ছে জেলেরা

খুলনা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৮:০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 32

ছবি: সংগৃহীত

প্রথম পোস্ট সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ফের উৎপাত শুরু করেছে বনদস্যুরা। আত্মসমর্পণকারী বনদস্যুরা নতুন করে আবার সেখানে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গেল ১৫ দিনে অন্তত ৫০ জেলেকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অস্ত্র হাতে তিন বাহিনীর অত্যাচারে জেলেদের দুর্ভোগও বেড়েছে। টোকেন না নিয়ে বনে গেলেই পড়তে হচ্ছে সশস্ত্র দস্যুদের কবলে। এ পরিস্থিতিতেও বনদস্যু দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

জেলে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় তিন বাহিনী দস্যুতা শুরু করেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার, আর্থিক অনুদানসহ নানা সুযোগ সুবিধাও তাদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর তারা ফের দস্যুতায় ফিরেছে। তিন বাহিনীর মধ্যে আত্মসমর্পণ করা মজনু বাহিনীর প্রধান মজনু নিজেই এখন তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মজনু প্রথম দস্যুতায় ফিরে যান। তার দেখাদেখি আলিম, মিলন পাটোয়ারী ও রবিউল পশ্চিম সুন্দরবনের পূর্বপ্রান্তে দস্যুতা শুরু করে। আর দাকোপ, মোংলা ও নলিয়ান এলাকায় দস্যুতা শুরু করে আসাবুর বাহিনী। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলাবারুদসহ ১১ সদস্যকে নিয়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আত্মসমর্পণ করে মজনু বাহিনী। এর পর থেকে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। কিন্তু ফের সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছে মজনু নিজেই। এক সপ্তাহে আট জেলেকে অপহরণ করেছে মজনু বাহিনী।

কয়রার ৬নং ও ৪নং কয়রা গ্রামের সুশান্ত রপ্তান, তপন মল্লিক, ছলেমান মোল্লা, নজরুল গাজী, জিয়ারুল, আজিজুল ইসলাম, মোংলা গাইন, গণেশ, মফিজুল গাজি দস্যু দলের কবলে পড়েন। পরে নৌকাপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফেরত আসেন। এভাবেই দক্ষিণ বেদকাশী, জোড়শিং, মহেশ্বরীপুর থেকে ২০ জেলের কাছ থেকে নৌকা ও জনসাধারণকে আটকে টাকা আদায় করেছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জে কাঁকড়া শিকারি তিন জেলেকে অপহরণ করে মজনু বাহিনী। পরে জিম্মি জেলেদের পরিবারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের অঙ্ক নিশ্চিত করে দস্যু বাহিনী। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে আত্মসমর্পণকারী আসাবুর ফের দস্যুতা শুরু করেছে দাকোপ এলাকায়। ওই এলাকার ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি ৭ আগস্ট থেকে আসাবুরের বাহিনী দস্যুতায় নেমেছে। জেলেরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশের জন্য আসাবুর বাহিনী টোকেন বাণিজ্য শুরু করেছে। যার প্রতি টোকেনের মূল্য ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে ৪০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং খরচও দিতে হচ্ছে। এই টোকেন প্রথমবার নিলে, মাসিক আবার দুই হাজার টাকা পরিশোধ করে নবায়ন করতে হচ্ছে। তবে যদি কেউ টোকেন না নিয়ে বনে প্রবেশ করে তাহলে তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, গত কয়েক দিনে আমার এলাকার অন্তত ৪০ জন জেলে এই দস্যু বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছে। পরে তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নাম্বারে খরচসহ ২০ হাজার ৪০০ টাকা পাঠাতে হয়েছে। তারপর মুক্তি মিলেছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, বেশ কয়েক জায়গা থেকে জেলে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করে পুলিশের সঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছি।

এদিকে জেলে বাওয়ালীরা প্রতিনিয়ত দস্যুদের কবলে পড়লেও এ বিষয়ে কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে খুলনার পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম চলছে। নৌ পুলিশের সঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছে। কয়রায় অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতারও করা হয়।

এর আগে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছে র‌্যাব। তবে এবার তাদের কার্যক্রম না থাকায় হতাশ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে র‌্যাব-৬ এর কমান্ডার লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফিনের ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

সুন্দরবনে আত্মসমর্পণকারী বনদস্যু বাহিনীর উৎপাত

মুক্তিপণ দিয়েই ছাড় পাচ্ছে জেলেরা

আপডেট সময় : ০৮:০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ফের উৎপাত শুরু করেছে বনদস্যুরা। আত্মসমর্পণকারী বনদস্যুরা নতুন করে আবার সেখানে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গেল ১৫ দিনে অন্তত ৫০ জেলেকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অস্ত্র হাতে তিন বাহিনীর অত্যাচারে জেলেদের দুর্ভোগও বেড়েছে। টোকেন না নিয়ে বনে গেলেই পড়তে হচ্ছে সশস্ত্র দস্যুদের কবলে। এ পরিস্থিতিতেও বনদস্যু দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

জেলে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় তিন বাহিনী দস্যুতা শুরু করেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার, আর্থিক অনুদানসহ নানা সুযোগ সুবিধাও তাদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর তারা ফের দস্যুতায় ফিরেছে। তিন বাহিনীর মধ্যে আত্মসমর্পণ করা মজনু বাহিনীর প্রধান মজনু নিজেই এখন তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মজনু প্রথম দস্যুতায় ফিরে যান। তার দেখাদেখি আলিম, মিলন পাটোয়ারী ও রবিউল পশ্চিম সুন্দরবনের পূর্বপ্রান্তে দস্যুতা শুরু করে। আর দাকোপ, মোংলা ও নলিয়ান এলাকায় দস্যুতা শুরু করে আসাবুর বাহিনী। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলাবারুদসহ ১১ সদস্যকে নিয়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আত্মসমর্পণ করে মজনু বাহিনী। এর পর থেকে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। কিন্তু ফের সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছে মজনু নিজেই। এক সপ্তাহে আট জেলেকে অপহরণ করেছে মজনু বাহিনী।

কয়রার ৬নং ও ৪নং কয়রা গ্রামের সুশান্ত রপ্তান, তপন মল্লিক, ছলেমান মোল্লা, নজরুল গাজী, জিয়ারুল, আজিজুল ইসলাম, মোংলা গাইন, গণেশ, মফিজুল গাজি দস্যু দলের কবলে পড়েন। পরে নৌকাপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফেরত আসেন। এভাবেই দক্ষিণ বেদকাশী, জোড়শিং, মহেশ্বরীপুর থেকে ২০ জেলের কাছ থেকে নৌকা ও জনসাধারণকে আটকে টাকা আদায় করেছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জে কাঁকড়া শিকারি তিন জেলেকে অপহরণ করে মজনু বাহিনী। পরে জিম্মি জেলেদের পরিবারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের অঙ্ক নিশ্চিত করে দস্যু বাহিনী। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে আত্মসমর্পণকারী আসাবুর ফের দস্যুতা শুরু করেছে দাকোপ এলাকায়। ওই এলাকার ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি ৭ আগস্ট থেকে আসাবুরের বাহিনী দস্যুতায় নেমেছে। জেলেরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশের জন্য আসাবুর বাহিনী টোকেন বাণিজ্য শুরু করেছে। যার প্রতি টোকেনের মূল্য ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে ৪০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং খরচও দিতে হচ্ছে। এই টোকেন প্রথমবার নিলে, মাসিক আবার দুই হাজার টাকা পরিশোধ করে নবায়ন করতে হচ্ছে। তবে যদি কেউ টোকেন না নিয়ে বনে প্রবেশ করে তাহলে তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, গত কয়েক দিনে আমার এলাকার অন্তত ৪০ জন জেলে এই দস্যু বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছে। পরে তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নাম্বারে খরচসহ ২০ হাজার ৪০০ টাকা পাঠাতে হয়েছে। তারপর মুক্তি মিলেছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, বেশ কয়েক জায়গা থেকে জেলে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করে পুলিশের সঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছি।

এদিকে জেলে বাওয়ালীরা প্রতিনিয়ত দস্যুদের কবলে পড়লেও এ বিষয়ে কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে খুলনার পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম চলছে। নৌ পুলিশের সঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছে। কয়রায় অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতারও করা হয়।

এর আগে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছে র‌্যাব। তবে এবার তাদের কার্যক্রম না থাকায় হতাশ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে র‌্যাব-৬ এর কমান্ডার লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফিনের ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।