ঢাকা ০৫:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
**সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ**
Logo শেখ মুজিবের জন্য ১০ লাখ মানুষ মারা গেছে: শফিকুল আলম Logo আমরা বেঁচে থাকতে সীমান্তে কেউ আসতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে যুবদল নেতা ছুরিকাঘাতে নিহত Logo মৌলভীবাজারে শাহ মোস্তফা (রহ.)-এর ওরসে হাজারও ভক্ত অনুরাগী ও দর্শনার্থীদের সমাগম Logo গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ছাড়া এই সরকার বেআইনি ও অবৈধ Logo সংস্কার প্রতিবেদন থেকে নতুন চার্টার, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে প্রেরণা মেধাবৃত্তি’র ফলাফল প্রকাশ Logo জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo শেরপুরে চলছে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা Logo মনে রাখবেন যারা অন্যায় করের তারা সংখ্যায় কম, আপনারা দাঁড়িয়ে গেলে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাবে: সারজিস আলম

সূফী-দরবেশ শব্দের উৎপত্তি যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:০৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 44
প্রথম পোস্ট সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমাদের সমাজে সূফী-দরবেশ শব্দটির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। সাধারণত সুফী-দরবেশ তাদেরকেই মনে করা হয় যারা পার্থিব সব লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকে এবং পরকালীন জীবনের ভাবনায় মগ্ন থাকেন।

সূফী শব্দটি উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, এটি আরবি صفاء ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ পবিত্রতা। যাদের আন্তরের ভিতর-বাহির পবিত্র তাদেরকে সূফী বলা হয়।

কারো কারো মতে, আহলুস সুফফাহ শব্দ থেকে সুফী শব্দের উৎপত্তি । তাদের মতে, যে মুসলমানরা ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদের বাইরে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করতো তারাই সুফী।

সুফী শব্দটি উৎপত্তি নিয়ে অনেকে আবার বলেছেন, যে নিস্পৃহ ও জ্ঞানী মুসলমানেরা ধর্মের দর্শন সম্মত ব্যাখা দিয়ে নিজেদের জীবনকে সেভাবে পরিচালনা করেছেন তাদেরকে সুফী বলা হয়।

সুফী বিষয়ে উৎপত্তি নিয়ে কারো কারো মতামত হলো— সুফী শব্দটি صوف(পশম) থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর কারণ, সুফীরা সহজ সাধারণ জীবন যাপনের অংশ হিসাবে পশমী কাপড় পরিধান করতেন।

অর্থাৎ, যে ব্যক্তিরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পশমের জামা পরিধান করে সংসার জীবন থেকে একেবারে নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করতেন, তারাই সুফী বা পশমের জামা পরিধানকারী।

বাস্তবিক অর্থেই ইসলামের প্রাথমিক যুগে পশমী পোশাক— অনাড়ম্বর, বিলাসহীনতা এবং অনাসক্তির প্রতীক ছিল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা. পশমী জুব্বাহ বা দীর্ঘ জামা পরিধান করতেন।

খুলাফায়ে রাশেদীন অর্থাৎ, অনুসরণীয় খলিফাদের পর যখন ইসলামে ধীরে ধীরে বিলাসিতা, আড়ম্বর ও সংসার আসক্তি বড়তে থাকলো তখন একদল মানুষ আড়ম্বর ও আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। এবং তারা নিজেদেরকে সমস্ত লোভ-লালসা ও মোহ থেকে মুক্ত রেখে অন্যদের সামনে একটি আদর্শ দাঁড় করালেন। আর তারাই সুফী বলে পরিচিতি লাভ করেছেন।

সুফী শব্দটি আরবি এর ফারসি প্রতিশব্দ হলো দরবেশ। তুর্কিতেও এই শব্দের প্রচলিত । অর্থাৎ, যারা অহংকার ও নফসের বিভ্রম পরিত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য মগ্ন থাকে তারাই দরবেশ বা সুফী। সমাজের এই শ্রেণীর মানুষেরা অন্যদের মাঝে ভালোবাসা বিলিয়ে থাকেন।

মানুষের মাঝে অজানাকে জানার আগ্রহ আজন্ম। অজ্ঞাত বিষয়কে খোঁজা বা অনুসন্ধানের ইচ্ছা মানুষের মাঝে সবসময় থাকে। আর অজানাকে জানার আগ্রহের সঙ্গে সুফীবাদের একটি যোগ সূত্র পাওয়া যায়। পৃথিবীতে যত সুফী, দরবেশ, সাধুর আবির্ভাব ঘটেছে তারা সকলেই অজানার সন্ধানে ছুটেছেন। আজানাকে জানার জন্য চেষ্টা করেছেন। তবে এই অজানার পেছনে ছোটার সাথে সাথে নিজের আত্মশুদ্ধি কামনাও করতেন তারা। তাদের নিজেকে পরিশুদ্ধির এই ধারণা কোরআন থেকে পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫১)

যারা সূফীবাদে নিজের জীবনকে ধারণ করতে চান তাদেরকে অবশ্যই এ চারটি বিষয় নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে।

সেগুলো হলো—

১. অদৃষ্ট বস্তুতে বিশ্বাস বা ঈমান।

২. অদৃষ্ট বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ বা ইরফান।

৩. অদৃষ্ট বস্তুর অনুসন্ধান বা তলব।

৪. অদৃষ্ট বস্তুতে বিলীন বা ফনা ফীললাহ।

নিউজটি শেয়ার করুন

সূফী-দরবেশ শব্দের উৎপত্তি যেভাবে

আপডেট সময় : ০১:০৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

আমাদের সমাজে সূফী-দরবেশ শব্দটির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। সাধারণত সুফী-দরবেশ তাদেরকেই মনে করা হয় যারা পার্থিব সব লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকে এবং পরকালীন জীবনের ভাবনায় মগ্ন থাকেন।

সূফী শব্দটি উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, এটি আরবি صفاء ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ পবিত্রতা। যাদের আন্তরের ভিতর-বাহির পবিত্র তাদেরকে সূফী বলা হয়।

কারো কারো মতে, আহলুস সুফফাহ শব্দ থেকে সুফী শব্দের উৎপত্তি । তাদের মতে, যে মুসলমানরা ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদের বাইরে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করতো তারাই সুফী।

সুফী শব্দটি উৎপত্তি নিয়ে অনেকে আবার বলেছেন, যে নিস্পৃহ ও জ্ঞানী মুসলমানেরা ধর্মের দর্শন সম্মত ব্যাখা দিয়ে নিজেদের জীবনকে সেভাবে পরিচালনা করেছেন তাদেরকে সুফী বলা হয়।

সুফী বিষয়ে উৎপত্তি নিয়ে কারো কারো মতামত হলো— সুফী শব্দটি صوف(পশম) থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর কারণ, সুফীরা সহজ সাধারণ জীবন যাপনের অংশ হিসাবে পশমী কাপড় পরিধান করতেন।

অর্থাৎ, যে ব্যক্তিরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পশমের জামা পরিধান করে সংসার জীবন থেকে একেবারে নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করতেন, তারাই সুফী বা পশমের জামা পরিধানকারী।

বাস্তবিক অর্থেই ইসলামের প্রাথমিক যুগে পশমী পোশাক— অনাড়ম্বর, বিলাসহীনতা এবং অনাসক্তির প্রতীক ছিল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা. পশমী জুব্বাহ বা দীর্ঘ জামা পরিধান করতেন।

খুলাফায়ে রাশেদীন অর্থাৎ, অনুসরণীয় খলিফাদের পর যখন ইসলামে ধীরে ধীরে বিলাসিতা, আড়ম্বর ও সংসার আসক্তি বড়তে থাকলো তখন একদল মানুষ আড়ম্বর ও আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। এবং তারা নিজেদেরকে সমস্ত লোভ-লালসা ও মোহ থেকে মুক্ত রেখে অন্যদের সামনে একটি আদর্শ দাঁড় করালেন। আর তারাই সুফী বলে পরিচিতি লাভ করেছেন।

সুফী শব্দটি আরবি এর ফারসি প্রতিশব্দ হলো দরবেশ। তুর্কিতেও এই শব্দের প্রচলিত । অর্থাৎ, যারা অহংকার ও নফসের বিভ্রম পরিত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য মগ্ন থাকে তারাই দরবেশ বা সুফী। সমাজের এই শ্রেণীর মানুষেরা অন্যদের মাঝে ভালোবাসা বিলিয়ে থাকেন।

মানুষের মাঝে অজানাকে জানার আগ্রহ আজন্ম। অজ্ঞাত বিষয়কে খোঁজা বা অনুসন্ধানের ইচ্ছা মানুষের মাঝে সবসময় থাকে। আর অজানাকে জানার আগ্রহের সঙ্গে সুফীবাদের একটি যোগ সূত্র পাওয়া যায়। পৃথিবীতে যত সুফী, দরবেশ, সাধুর আবির্ভাব ঘটেছে তারা সকলেই অজানার সন্ধানে ছুটেছেন। আজানাকে জানার জন্য চেষ্টা করেছেন। তবে এই অজানার পেছনে ছোটার সাথে সাথে নিজের আত্মশুদ্ধি কামনাও করতেন তারা। তাদের নিজেকে পরিশুদ্ধির এই ধারণা কোরআন থেকে পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫১)

যারা সূফীবাদে নিজের জীবনকে ধারণ করতে চান তাদেরকে অবশ্যই এ চারটি বিষয় নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে।

সেগুলো হলো—

১. অদৃষ্ট বস্তুতে বিশ্বাস বা ঈমান।

২. অদৃষ্ট বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ বা ইরফান।

৩. অদৃষ্ট বস্তুর অনুসন্ধান বা তলব।

৪. অদৃষ্ট বস্তুতে বিলীন বা ফনা ফীললাহ।