নড়াইলের আশ্রয়ণ প্রকল্প: স্বপ্নের ঘরে তালা, কোচিং আর ভাড়াটিয়ার আড্ডা

- আপডেট সময় : ০৫:২৪:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
- / 47
নড়াইলে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দকৃত একাধিক ঘরে তালা ঝুলছে। কিছু ঘরে কোচিং সেন্টার চালানো হচ্ছে, আবার কোথাও ভাড়া দেওয়া হয়েছে অন্যদের। প্রকৃত ভূমিহীনদের বাছাইয়ে ব্যর্থতা, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক অনিয়ম এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খালি পড়ে থাকা ঘরগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত অভাবীদের জন্য নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নড়াইল সদর উপজেলা প্রশাসন এ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের নামে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত অনেক ঘরই অব্যবহৃত বা ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের দূর্বাজুড়ি গ্রামে রেনুকা রানীর নামে বরাদ্দকৃত একটি ঘরে তালা ঝুলতে দেখা যায়। রেনুকা রানী স্থানীয় ইউনিয়নের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য। তার স্বামীর ও পৈত্রিক সম্পত্তি এবং নিজস্ব বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে তিনি এই দুর্যোগ সহনশীল ঘরটি বরাদ্দ নিয়েছেন।
একই ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গা গ্রামে জয়ন্তী রানীর নামে বরাদ্দকৃত ঘরটি কোচিং সেন্টারে রূপান্তরিত হয়েছে। সকাল থেকে সেখানে স্কুলপড়ুয়াদের কোচিং চলে, আর কোচিং শেষে ঘরটি তালাবদ্ধ থাকে। শাহাবাদ ইউনিয়নের রজিবুল ইসলামের নামে বরাদ্দকৃত ঘরটিও তালাবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, ঘর পাওয়ার পর থেকে তাকে এলাকায় দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের হ্যাপি বেগমের নামে বরাদ্দকৃত একটি ঘরে বড়গাতি গ্রামের এক নারী ভাড়া থাকছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী জানান, তার নিজের কোনো ঘর না থাকায় মাসিক ৫০০ টাকায় এই ঘরটি ভাড়া নিয়েছেন।
প্রকৃত ভূমিহীনরা অবশ্য এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সীতারামপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ভাবনা রানী খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। তিনি বলেন, “মোগো ঘরবাড়ি নাই, আর সরকার মোগো ঘর দেয় নাই। আর জ্যাগো ঘরবাড়ি, জায়গাজমি আছে হ্যাগো ঘর দিয়া থুইছে।”
রেনুকা রানী তার তালাবদ্ধ ঘরের ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়ে এ বিষয়ে না লেখার অনুরোধ করেন। জয়ন্তী রানী বলেন, “ঘরটি খালি পড়ে আছে তাই কোচিং করাচ্ছি।” শাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সুবিধাভোগী বাছাইয়ে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা না নেওয়ায় এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, “এ বিষয়ে কিছু অভিযোগ এসেছে এবং কিছু অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। খালি পড়ে থাকা ঘরগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।”
এই পরিস্থিতি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট