বিএনপি নেতা চাচা-ভাতিজার পৃথক পৃথক শোভাযাত্রা
- আপডেট সময় : ০৬:৩১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 27
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আভ্যন্তরীণ বিবাদ প্রকাশ্যে। চাচা-ভাতিজার লড়াই এখন তুঙ্গে। মহান বিজয় দিবসে আলাদা আলাদা ভাবে শোভাযাত্রা মিছিল।
জেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম রহমান বাবুর নেতৃত্বে সোমবার দুপুর ১টার দিকে শোভাযাত্রাসহ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেষ হয়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তারা (বাবু)।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম, অ্যাডভোকেট সিরুসহ নেতৃবৃন্দ।
এর আগে দুপুর ১২ টার দিকে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদের নেতৃত্বে মহান বিজয় দিবসে স্থানীয় উয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তারা।
এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামাল আজাদ পান্নুসহ ছাত্রদল যুবদল, শ্রমিক দল, মহিলা দলের নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, বিজয় দিবসে ঝিনাইদহ-২ আসন কেন্দ্রিক চাচা-ভাতিজার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। যদিও রোববার বিকালে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আভ্যন্তরীণ বিবাদ নেই এবং নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ বলে জেলা সভাপতি এমএ মজিদ দাবি করেন।
কিন্তু স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বাবু এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, জেলা বিএনপির সভাপতির (বাবুর চাচা) প্রত্যক্ষ নির্দেশে ১৩ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডু উপজেলার লালন বাজারে কর্মিসভায় ও ১৪ ডিসেম্বর জেলা শহরের কার্যালয়ে হামলাসহ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পরে উভয়পক্ষ পালটা পালটি মিছিল এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।
ইব্রাহীম রহমান বাবু ও এমএ মজিদ সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। বাবু ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা সভাপতি মরহুম মসিউর রহমানের বড় ছেলে। মজিদ মসিউর রহমানের ভাইয়ের (আপন চাচাতো ভাই) ছেলে মজিদ। নানা ইস্যুতে মসিউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় মজিদ দলের নেতৃত্ব পেয়ে যায়। জেলা সভাপতির পদ থেকে বাদ পড়েন মসিউর রহমান। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়।
টেক্কা দিতে অনুগতদের নিয়ে একটি গ্রুপ গড়ে তোলেন মসিউর। নিজের বাড়িতে দলীয় সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে মজিদ জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। জেলা শহরের এইচএসএস সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয় স্থাপন করেন তিনি (মজিদ)। টানাপড়েনের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন মসিউর রহমান। বাবার শূন্যস্থান পূরণ করতে ডা. ইব্রাহীম রহমান বাবু জেলা বিএনপিতে জায়গা করে নেন। বর্তমান কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ লাভ করেন তিনি।
এরপর শুরু হয়ে যায় ঝিনাইদহ-২ আসনে ( হরিণাকুণ্ডু-সদর উপজেলা) আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে চাচা-ভাতিজার লড়াই। মসিউর রহমান এই আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৩ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডু উপজেলার লালন বাজারে বাবু একটি কর্মিসভা আহবান করে। ওই সভায় হামলা চালায় সংশ্লিষ্ট জোড়াদহ ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুর রহমান রনির নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। আহত হন অন্তত ১০ জন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাবু সমর্থকরা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং মজিদের কুশপত্তলিকা দাহ করে। পরের দিন ১৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। একই দিন জেলা শহরে বাবুর কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এর আগে মসিউর রহমানের দ্বিতীয় মৃত্যু দিবস পৃথক পৃথক ভাবে পালন করেছে উভয় পক্ষ। জেলা শিশু একাডেমিতে বাবু গ্রুপ এবং স্থানীয় প্রিয়া সিনেমা হলের সামনে অপর পক্ষ (জেলা বিএনপি) স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
২ নভেম্বর (২০২৪) আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. শামসুজ্জামান দুদু। ১ নভেম্বর (২০২৪) বাবু আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুক।
রোববার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জেলা সভাপতি এমএ মজিদ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, ছাত্রদল, যুবদল কৃষক দল মহিলা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। ওই সভায় দলের মধ্যে কোনো গ্রুপ বা বিবাদ নেই বলে দাবি করেন মজিদ।