ব্যক্তিগত ইজারায় সরকারি জমি
মিল্কভিটার গোচারণ ভূমিতে ঘাসের বদলে আবাদ হচ্ছে শসা
- আপডেট সময় : ০৯:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 42
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে ‘বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. (মিল্কভিটা)’র অনুকূলে থাকা গোচারণ ভূমি আবারও বেহাত হতে শুরু হয়েছে। অতি মুনাফালোভী ভূমিদস্যু একটি চক্র মিল্কভিটার অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গোচারণভূমি শসা চাষিদের কাছে উচ্চ মূল্যে ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরে বৃ-আঙ্গারু এলাকায় অন্তত দেড়শত বিঘা জমি সমবায়ীদের মধ্যে বণ্টন করে কাঁচা ঘাস উৎপাদনের কথা থাকলেও দিগন্ত জুড়ে চাষ হচ্ছে শসা। এতে শসা চাষিরা লাভবান হলেও গোচারণভূমি কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামারীরা।
সরেজমিনে বৃ-আঙ্গারু এলাকার গোচারণভূমিতে গেলে দেখা যায় দিগন্ত জুড়ে আবাদ হচ্ছে শসা। মাঠের পর মাঠ থেকে শতশত মানুষ একযোগে গাছ থেকে শসা তুলে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।
জানতে চাইলে শসা চাষি পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার নতুন গ্রামের আব্দুল জলিল, জাবেদ সরকার জানান, তারা বৃ-আঙ্গারু গ্রামের স্থানীয় একটি প্রাথমিক সমবায় সমিতির সভাপতি হাজি আব্দুল লতিফ এবং একটি সমিতির ম্যানেজার তাহেজের মাধ্যমে ১২-১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বাৎসরিক ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছেন।
জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মিল্ক-ভিটার বিস্তীর্ণ এই গোচারণভূমিতে শসা চাষের নিয়ম আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, তারা টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছেন। এছাড়া শসা চাষের ফলে জমির আগাছা পরিষ্কার হবে বলেও জানান।
আরেক শসাচাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, মিল্কভিটার আওতাধীন এখানকার অন্তত দেড়শত বিঘা জমিতে শসা চাষ হচ্ছে। সবাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়েই চাষ করছে।
বৃ-আঙ্গারু সরকার পাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি. এর ম্যানেজার তাহেজ জানান, তার সমিতি মিল্কভিটা থেকে সামান্য পরিমাণ জমি পেলেও কারা শসা চাষিদের ইজারা দিয়েছেন তিনি তা জানেন না। তবে তিনি শুনেছেন সমিতির সভাপতি ৮-১০ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি ইজারা দিয়েছেন।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণ বাঙ্গালপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মোঃ লতিফ জানান, কোন শসা চাষিকে গো-চারণ ভূমি ইজারা দেওয়া হয়নি।
আবার শাহজাদপুর বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক ডাক্তার মো. ছাইদুল ইসলাম অন্য আরেকটি গণমাধ্যমকে জানান, ঘাস চাষ করার জন্য গো-চারণ ভূমির প্রতি একর জমি মাত্র দুই হাজার টাকার বিনিময়ে গো-খামারীদের মাঝে বাৎসরিক ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন কার্যালয়। এখানে অন্য কোন ফসল আবাদ করার নিয়ম নেই। সরজমিন মাঠে গিয়ে বিষয়টি দেখার কোন সুযোগ নেই, লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর পাবনা জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন বুড়ি পোতাজিয়া, দখলবাড়ী, রামকান্তপুর, হাড়নি, রাউতবাড়ী, পশ্চিম খারুয়া, নাগডেমরা, বিলচান্দ, বৃ-আঙ্গারু ও রতনপুর এই মৌজাগুলোর আওতায় বিল এলাকার ১১৭৯ দশমিক ৮৩ একর সি এস খতিয়ানভুক্ত খাসজমি তত্কালিন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নামে এস এ খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়। ১৯৮২ সালে ওই জমির মধ্যে ১০৩০ একর খাস ভূমি গেজেটভুক্ত করে গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মিল্কভিটার অনুকুলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ইজারা প্রদান করে।
এরপর সমবায় মন্ত্রণালয়, উপজেলা প্রশাসন ও মিল্কভিটার প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি গোচরণ ভূমিগুলো মিল্কভিটার তালিকাভুক্ত প্রাথমিক দুগ্ধ উত্পাদনকারি সমবায় সমিতির নামে বরাদ্দ দেয়। এই গোচরণ ভূমিতে গবাদীপশু লালন পালন করে দুধের উত্পাদন বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটি সমবায় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে আসছে।