সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না
চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির
- আপডেট সময় : ০৮:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 36
নানা উদ্যোগের পরও চট্টগ্রামে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে চাল-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব নেই। উল্টো দাম আরও বাড়ছে। মাছের দামও বেড়েছে। চালে দামও হু হু করে বাড়ছে। প্রতি বস্তা চালে দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম।
বাজারে বিভিন্ন পণ্যে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত দুই মাসে চাল, তেলসহ ৬টি পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে তদারকি। গঠন করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়াও ভোজ্যতেল-চালসহ নানা পণ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বলছেন, যে কোনো মূল্যে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হয় এমন দাম আদায় করা যাবে না। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা পর্যায়েও টাস্কফোর্স বাজার মনিটরিং করছে। টাস্কফোর্সের বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত একমাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না। ফলে বাজারে ভোজ্য তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। দামও বাড়ছে হু হু করে। সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশে ডলার সংকট এখনো চলমান। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত দাম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মিল মালিকদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা বেড়ে বর্তমানে ৩ হাজার টাকার প্রতি বস্তা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১৫০ টাকা। উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা পরিবহণ সংকট, সরবরাহ সংকট, ধানের দাম বৃদ্ধি ও মজুদ কমে যাওয়া অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিন্ডিকেট কারসাজি করে প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চালের বাজার অস্থির করে তোলেন মিল মালিকরা। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। মূলত প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে পুঁজি করে ধান-চালের দাম উঠানামা করান এসব আসাধু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে নগরীর চাক্তাইর মিল মালিকরা বলছেন, গত দুই মাসে মনপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত; যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, শীতকালে মুরগি লালন-পালন কষ্টকর। অনেক সময় মুরগি খামারে মারা যায়। এ কারণে মুরগির সরবরাহ কম। এতে চাহিদা অনুযায়ী মুরগি না আসায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সোমবার পাইকারিতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৫৮-১৬০ টাকায়, বুধবার রাতে সেই মুরগি বিক্রি হয় ২১০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি হচ্ছে ২১০ টাকার বেশি দরে।
বাজারদর : চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে সবজির দাম কমেছে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি কেজি মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এর দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ছিল। বিভিন্ন ধরনের বেগুন ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শিমের দাম ১০০ টাকা থেকে কমে মানভেদে ৬০-৬৫ টাকায় এসেছে। মূলা, ঢেঁড়শ, তিতা করলা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় মিলছে। এ ছাড়া লাউ, শসা, পটোল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, ধুন্ধল ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে আছে। ধনেপাতা ও কাঁচামরিচের দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৫০ টাকায় নেমেছে। মাছের মধ্যে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।