মৌলভীবাজারে শাহ মোস্তফা (রহ.)-এর ওরসে হাজারও ভক্ত অনুরাগী ও দর্শনার্থীদের সমাগম
- আপডেট সময় : ১২:২১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / 60
সিলেটের হযরত শাহ্জালাল (রহ.) এর অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা বোগদাদী শের সওয়ার চাবুকমার হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাহবুবে এলাহি (রহ.) এর ৬৮৪তম ওরস মোবারক মৌলভীবাজার শহরের মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ.) এর এই ওরস মোবারক প্রতি বছরের বাংলা সনের ১লা মাঘ অনুষ্ঠিত হয়।
উরসকে ঘিরে জেলা শহরের শাহ মোস্তফা সড়ক-সহ আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মেলা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ইং, সকাল থেকেই দেখা গেছে মেলায় হাজারও দর্শনার্থীর ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক হাজারও মানুষ ভিড় করেন মেলায়।
ওরস মোবারককে কেন্দ্র করে পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা দৈনিক জনসংগ্রাম পত্রিকা’র সম্পাদক ও প্রকাশক, সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, এই মেলা আমাদের ঐতিহ্য। মেলায় নানা ধরনের খই ও চিড়া পাওয়া যায়, সেগুলো কিনতে এসেছি। মেলার অন্যতম আকর্ষণ খই, বিন্নি, বাতাসা, চিনি ও গুড়ের তৈরি জিলাপি এবং গরম পেঁয়াজু-সহ হরেক রকমের খাবার।
তিনি আরও বলেন, ওরস মোবারকে এসে জানা যায়, এ উপলক্ষে আগের দিন থেকে বসেছে মেলা লোকজ। রাতেই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ওরস শেষ হবে। প্রথা অনুযায়ী এবারও বুধবার (১৫ জানুয়ারি/১ মাঘ) সকাল সাড়ে ৯টার সময় মৌলভীবাজার শহরে অবস্থিত হজরত শাহ মোস্তফার (র:) মাজারে গিলাফ চড়ানো হয়। পরে বেলা সাড়ে ১০টার সময় তাবারক (শিরনি) বিতরণ করা হয়। এর পরে জিকির আজকারে শুরু হয় বার্ষিক ওরস মোবারক। গিলাফ চড়ানোর সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ শামসুল হক, ওরস উদযাপন কমিটির আহবায়ক জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও দরগা শরীফের মোতাওয়াল্লি সৈয়দ খলিলুল্লাহ ছালিক জুনেদ। ওরস উপলক্ষে সাজানো হয়েছে পুরো মাজার এলাকা। প্রতিবারের ন্যায় এবছরও ৩২টি গরু জবাই করে তাবারক (শিরনির) আয়োজন করা হয়।
তবে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে শাহ মোস্তফা ওরসকে ঘিরে শহরের সড়ক-সহ আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলায় দোকান বসে পুরোদমে বেচাকেনা চলছে।
দেখা যায়, মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পাশাপাশি কুটির শিল্প সামগ্রী, শিশুদের নানা ধরনের খেলনা, সংসারের তৈজষপত্র, দা, খুন্তি, কাঠের আসবাব, প্রসাধনীসামগ্রী, কৃষিপণ্য, ফুলগাছ, তিলুয়া-বাতাসা, খই, চিড়া-সহ নানা খাদ্যসামগ্রী খাবারের দোকান বসেছে। যা এই ঐতিহ্যবাহী মেলাকে প্রাণ দিয়েছে।
দরগাহ প্রাঙ্গণ-সহ আশপাশের এলাকাজুড়ে দুই থেকে তিনদিন আগে থেকেই মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ওরস ও মেলাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভক্ত অনুরাগীরা ও মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নরসিংদী থেকে কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে মেলায় এসেছেন জসিমউদ্দিন ও আখলাক মিয়া। তারা জানান, কাঠের তৈরি জিনিসপত্র মোটামুটি দামে সস্তা এবং এগুলো অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। কাঠের তৈরি আসবাব রুচিশীল এবং মানসম্পন্ন হয়। তাই অনেক সৌখিন মানুষ এগুলো তাদের সংগ্রহে রাখেন।
এ ছাড়াও রয়েছে মাটি, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা পণ্য। পাওয়া যাচ্ছে কামারের তৈরি দা-বঁটি, করাই এবং বাচ্চাদের খেলনা। এসব গৃহস্থালি পণ্য কিনতে মেলায় আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
উল্লেখ্য, হযরত শাহ্জালাল (রহ.) এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রহ.)। তিনি হযরত শাহ জালালের নির্দেশে মৌলভীবাজারে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসেন ওই সময়।