উত্তরা ও তুরাগ নদ সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি
ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩
- আপডেট সময় : ০৯:২৮:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 26
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখল করা নিয়ে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থি অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মুসল্লি আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ বুধবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিব ইস্কান্দার দুইজন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বী সৈয়দ ওসিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে তাদের আরও এক সাথী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু এলাকার বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০)। অপরজন হলেন বগুড়ার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (৬৫)।
ওসি হাবিব গণমাধ্যমকে বলেন, রাতে ইজতেমা ময়দানে মারামারির ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। একজন হাসপাতালে, আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী শুক্রবার থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিন ইজতেমা করতে চান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা তাঁদের এখানে ইজতেমা করতে দিতে চান না। এ জন্য আগে থেকে ইজতেমা মাঠ দখলে নেন জুবায়ের অনুসারীরা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চারদিক থেকে মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন সাদের অনুসারীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে মাঠ ছেড়ে দেন জুবায়ের অনুসারীরা।
ঢাকার বাদামতলী এলাকার তাবলিগ জামাতের সাথি ও মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা সাথি মুরব্বিদের নির্দেশনা মোতাবেক গেটে পাহারা দিচ্ছিলাম। কোনো কোনো সাথি পালা বদল করে ঘুমাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাদ অনুসারীরা বিদেশি খিত্তার (কামারপাড়া সেতুর গোড়া) পাশ দিয়ে হাতে লাঠি, রডসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাঁরা মূল গেট (৬ নম্বর) দখলে নেন। এরপর দলে দলে চারদিক থেকে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
তবে ভিন্ন কথা বলছেন সাদের অনুসারীরা। সাদের অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, ‘রাতে মাঠে ঢোকার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে আমাদের সাথিরা আসছিলেন। কিন্তু জুবায়ের অনুসারীরা রাস্তার বিভিন্ন অংশে আমাদের সাথিদের বাধা দেন, মারধর করেন। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পুলিশও আসে। কিন্তু তা–ও তাঁরা থামছিলেন না। এদিকে আমাদের অনেক সাথি আসতে থাকায় ইজতেমা মসজিদে জায়গা না পেয়ে কামারপাড়া ব্রিজ ও রাস্তার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে হঠাৎ অনবরত ঢিল ছুড়তে থাকেন জুবায়ের অনুসারীরা। পরে আমাদের সাথিরা বাধ্য হয়ে মাঠে প্রবেশ করেন।’
উত্তরা ও তুরাগ নদ সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উত্তরা ও তুরাগ নদ সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বুধবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্দ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ℐℐℐ/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে বুধবার দুপুর ২টা থেকে কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা সেক্টর-১০ এবং তৎসংলগ্ন তুরাগ নদের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ ইত্যাদি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হলো।
এদিকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কাকরাইল মসজিদ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে সকাল থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, কাকরাইল মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত।
এ বিষয়ে র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কাকরাইল মসজিদ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় র্যাব-৩ নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
তাছাড়া উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টঙ্গীতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার সকালে বিজিবি জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, তাবলিগ জামাতের সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের সংঘর্ষের ঘটনায় টঙ্গীতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি
অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ২০১৮ এর ৩০ ও ৩১ ধারায় পুলিশ কমিশনারকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের ৩ (তিন) কিলোমিটার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় নিম্নলিখিত আদেশ বলবৎ থাকবে।
বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইজতেমা মায়দানসহ আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা বা জমায়েত এবং মিছিল সমাবেশ করতে পারবে না, কোনো প্রকার অস্ত্র-শস্ত্র, ছুরি, লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি বা এ জাতীয় কোনো পদার্থ বহনে নিষেধাজ্ঞা, কোনো প্রকার লাউডস্পিকার বা উচ্চস্বরে শব্দ করতে পারবে না বলে পত্রে উল্লেখ করার পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়।
এবিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।