ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
**সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ**
Logo শেখ মুজিবের জন্য ১০ লাখ মানুষ মারা গেছে: শফিকুল আলম Logo আমরা বেঁচে থাকতে সীমান্তে কেউ আসতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে যুবদল নেতা ছুরিকাঘাতে নিহত Logo মৌলভীবাজারে শাহ মোস্তফা (রহ.)-এর ওরসে হাজারও ভক্ত অনুরাগী ও দর্শনার্থীদের সমাগম Logo গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ছাড়া এই সরকার বেআইনি ও অবৈধ Logo সংস্কার প্রতিবেদন থেকে নতুন চার্টার, তার ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে প্রেরণা মেধাবৃত্তি’র ফলাফল প্রকাশ Logo জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo শেরপুরে চলছে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা Logo মনে রাখবেন যারা অন্যায় করের তারা সংখ্যায় কম, আপনারা দাঁড়িয়ে গেলে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাবে: সারজিস আলম

‘অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 18
প্রথম পোস্ট সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রিনেমড হতে পারে। যেমন জেলা ও দায়রা জজ একই ব্যক্তি, যখন সিভিল মামলা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ, আবার ওই একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন তখন তিনি দায়রা জজ। তেমনি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যক্তিরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে চলে যাবে, ওনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটায় সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতার কোনো জায়গা নেই।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগে (ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার) যে রিভিউ পেন্ডিং আছে তা বাইপাস করেই হাইকোর্টের এই রায়ের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন আছে? কারণ, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দুটি পার্ট। এক হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ নাকি অবৈধ। এই পার্টে চারজন বলছেন অবৈধ, তিনজন বলেছেন, বৈধ। আবার দ্বিতীয় পার্টে সব বিচারপতি বললেন, পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে। এই যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে এটা বলার আগেই পঞ্চদশ সংশোধনী চলে এসেছে। তাহলে ধরে নেয়া হবে, ওই জাজমেন্ট কার্যকর আছে। তা হলে কমপক্ষে আগামী দুটি নির্বাচনে তো আপিল বিভাগের এটেনশন লাগে না। অর্থাৎ আপিল বিভাগে থাকা ত্রয়োদশ সংশোধনীর রিভিউ রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না।

এটর্নি জেনারেল বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কীভাবে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে, সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, বিচার বিভাগ কীভাবে এফেক্টেড হয়েছে, সে কথাগুলো রায়ে বলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রেফারেন্ডাম তথা জনগণের ক্ষমতা সংকুচিত করার বিধান অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে গণভোট ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয় পরবর্তী পার্লামেন্ট দেখবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।

তৎকালীন দুই প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচার বিভাগ ধ্বংসের জন্য দায়ী উল্লেখ করে এটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রায়ের ১৭ মাস পর খায়রুল হক তা প্রকাশের বিষয় তুলে ধরেন।

রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। শুনানিতে রিট আবেদনকারী, বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ, জামায়াত, গণফোরাম, ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরেন।

অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত অক্টোবরে একটি রিট আবেদন করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর দ্বাদশ দিনে ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। পরদিন আদালত রায়ের জন্য আজ ১৭ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় পর্যবেক্ষণসহ রুল আংশিক যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘অন্তর্বর্তী সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে’

আপডেট সময় : ০৯:৪০:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রিনেমড হতে পারে। যেমন জেলা ও দায়রা জজ একই ব্যক্তি, যখন সিভিল মামলা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ, আবার ওই একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন তখন তিনি দায়রা জজ। তেমনি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যক্তিরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে চলে যাবে, ওনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটায় সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতার কোনো জায়গা নেই।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগে (ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার) যে রিভিউ পেন্ডিং আছে তা বাইপাস করেই হাইকোর্টের এই রায়ের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন আছে? কারণ, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দুটি পার্ট। এক হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ নাকি অবৈধ। এই পার্টে চারজন বলছেন অবৈধ, তিনজন বলেছেন, বৈধ। আবার দ্বিতীয় পার্টে সব বিচারপতি বললেন, পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে। এই যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে এটা বলার আগেই পঞ্চদশ সংশোধনী চলে এসেছে। তাহলে ধরে নেয়া হবে, ওই জাজমেন্ট কার্যকর আছে। তা হলে কমপক্ষে আগামী দুটি নির্বাচনে তো আপিল বিভাগের এটেনশন লাগে না। অর্থাৎ আপিল বিভাগে থাকা ত্রয়োদশ সংশোধনীর রিভিউ রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না।

এটর্নি জেনারেল বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কীভাবে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে, সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার কীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, বিচার বিভাগ কীভাবে এফেক্টেড হয়েছে, সে কথাগুলো রায়ে বলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রেফারেন্ডাম তথা জনগণের ক্ষমতা সংকুচিত করার বিধান অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে গণভোট ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয় পরবর্তী পার্লামেন্ট দেখবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।

তৎকালীন দুই প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচার বিভাগ ধ্বংসের জন্য দায়ী উল্লেখ করে এটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রায়ের ১৭ মাস পর খায়রুল হক তা প্রকাশের বিষয় তুলে ধরেন।

রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। শুনানিতে রিট আবেদনকারী, বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ, জামায়াত, গণফোরাম, ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য তুলে ধরেন।

অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত অক্টোবরে একটি রিট আবেদন করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর দ্বাদশ দিনে ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। পরদিন আদালত রায়ের জন্য আজ ১৭ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় পর্যবেক্ষণসহ রুল আংশিক যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।