বাংলাদেশের নির্বাচন ও দুর্নীতি নিয়ে ডা. আকাশের বিস্ফোরক মন্তব্য

- আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / 85
সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. আকাশ বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি, যা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে নির্বাচন, ২০১৮ সালে “রাতের ভোট” এবং ২০২৪ সালে “ডামি নির্বাচন”—এই ধারাবাহিক অনিয়মের ফলে জনগণের ভোটাধিকার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তার মতে, জনগণের একমাত্র চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে তাদের মতপ্রকাশ করতে পারবে।
ডা. আকাশ বলেন, “২০১৪ সালে বিনা ভোটে নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে রাতের ভোট হয়েছে, আর ২০২৪ সালে হয়েছে ডামি নির্বাচন। জনগণের ভোটাধিকার পুরোপুরি সংকুচিত হয়ে পড়েছে।” তিনি মনে করেন, জনগণের এই দাবিকে সামনে রেখে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ আন্দোলনে নেমেছে, যার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে।
তার মতে, জনগণের এই দাবিকে সামনে রেখে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ আন্দোলনে নেমেছে, যার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, “এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও শেখ হাসিনার পতন চেয়েছেন, কারণ তার নেতৃত্বে একটি দানবীয় সরকার গঠিত হয়েছিল।”
আরও পড়ুন: রুপক আকন্দের কণ্ঠে ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা’ ভাইরাল
ডা. আকাশের মতে, আওয়ামী লীগের পতনের পর জনগণ স্বস্তির আশা করেছিল, কিন্তু বাস্তবে তারা এখন চরম অস্বস্তিতে রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঠিক পথে এগোতে পারেনি। বিশেষ করে ড. ইউনুস যদি প্রথমেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গড়তেন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতেন, তাহলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এতটা সংকটময় হতো না। বরং তিনি ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তি তৈরি করেছেন।
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকা জরুরি। কিন্তু ডা. আকাশের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে, এবং বর্তমান সরকারও এগুলো পুনর্গঠনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, “একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সেই সমান সুযোগ পাচ্ছে না। জাতীয় পার্টি এখন কার্যত কোনো রাজনীতি করতে পারছে না, এমনকি দেশে ইফতার মাহফিল আয়োজন করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে!”
ডা. আকাশ দেশের প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে লুটপাটের সংস্কৃতি চলছে। বিএনপির একজন নেতা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ১৫০ একর সরকারি জমি দখল করেছেন, যা প্রশাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।”
সম্প্রতি দেশ টিভির এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, ওয়াসায় ১৫০ জনকে রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়েছে, যেখানে নিয়োগ পরীক্ষার কোনো স্বচ্ছতা ছিল না। সাবেক উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও এসেছে এই দুর্নীতির সঙ্গে। অথচ, এ নিয়ে সরকার এখনো কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, এবং কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, “দেশের বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, পক্ষান্তরে অন্যদের দমন করা হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি, অথচ অন্যদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।”
ডা. আকাশ বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তার মতে, “যদি নির্বাচনী মাঠ সমতল না করা হয়, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কখনোই সম্ভব হবে না।” তিনি প্রশাসনকে আহ্বান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিতে।
ডা. আকাশের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সংকট এখনো কাটেনি। প্রশাসনিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা এই সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধান খুঁজে বের করবে এবং একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত করবে।
সূত্র: টকশো
প্রথম পোস্ট/শরিফ